উপাচার্য ছাড়াই চলছে সরকারি-বেসরকারি ৪১ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম

- আপডেট সময় : ০৬:৪৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
সরকারি-বেসরকারি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন উপাচার্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই পদ ফাঁকা রেখেই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শুধু উপাচার্য পদ ফাঁকা রয়েছে ৩৭ বেসরকারি ও ৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়া উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ ফাঁকা রয়েছে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আর্থিক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। মূলত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের স্বার্থেই ঊর্ধ্বতন পদগুলো ফাঁকা থাকে বলেও জানা যায়। তবে ইউজিসি বলছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে প্যানেল পাঠানো হয়। তাই বাতিল হয়ে যায়। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যানেল প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নেই, তাদের নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্যানেল পাঠানোর পর সব প্রক্রিয়া শেষে প্রজ্ঞাপন জারি হতে অনেক ক্ষেত্রে এক বছরও সময় লেগে যায়। ফাইল পাঠানোর পর দীর্ঘসময় কেন অপেক্ষা করতে হয় এবং এত দীর্ঘসূত্রতা কোথায় সেটাও চিহ্নিত করা দরকার। যদি সমযোগ্যতাসম্পন্ন না পাওয়া যায় তাহলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুতই যেন তা ফেরত পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৩টি যার মধ্যে ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ৮১ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ৬২ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নেই। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৬টি থাকলেও ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নেই। বেসরকারি অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ শূন্য রয়েছে।
উপাচার্য ছাড়া বেসরকারি ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো- মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দ্যা পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অটারনেটিভ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খাজা ইউনুস আলী ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স, রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি,
নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়, জাস্টিস আবু জাফর সিদ্দিকী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মমতাজ বেগম ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, মাইক্রোল্যাব ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচসেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি।
উপাচার্য ছাড়া ৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলো- শরিয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ ধরনের কমিটি থাকতে হয়। এর মধ্যে তিনটি কমিটির সভাপতি থাকেন উপাচার্য ভিসি। তিনটি কমিটিতে উপাচার্য মনোনীত শিক্ষক সভাপতি হন। আর বাকি তিনটি কমিটিতে সভাপতি থাকেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। এই তিন কমিটিতেও সদস্য হিসেবে থাকেন উপাচার্য আর একটিতে কোষাধ্যক্ষ থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয় উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের স্বাক্ষরে। অথচ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলেও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আর্থিকসহ নানা বিষয়ে অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষের স্বার্থে ফাঁকা রাখা হয় ঊর্ধ্বতন পদগুলো
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষরা নিজেদের স্বার্থে উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন পদগুলো ফাঁকা রাখেন। এতে আর্থিকসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়ম করা যায় বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেক সময় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি রেখে ফাইল ইউজিসিতে পাঠায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ সময় চান যেন উপাচার্যসহ বড় পদগুলো ফাঁকা থাকে। এতে তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম করা সহজ হয়।
সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নেই তাদের আমরা নিয়মিত প্রেসার করছি যাতে দ্রুতই তারা উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে কাজ করেন। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যখন নতুন বিভাগ খোলার অনুমতি চায় তখন প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন পদগুলো পরিপূর্ণ আছে কিনা সেটা মূল ক্রাইটেরিয়া হিসেবে দেখা হয়। এছাড়া আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয় মনিটরিং করছি এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে কাজ করছি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ তিন সদস্যের মধ্যে সবার যোগ্যতা সমান না হলে উপাচার্য প্যানেল ফাইল ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনজনের ফাইলে যদি ইউজিসির সব ক্রাইটেরিয়া পরিপূর্ণ না থাকে তাহলে আমরা ফিরিয়ে দেই। কারণ তিনজনের ফাইলে সবার ক্রাইটেরিয়া পরিপূর্ণ থাকলে আমাদের পক্ষে ভালো কাউকে নিয়োগ করা সুবিধা হয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে এমন একজন এবং ক্রাইটেরিয়া পরিপূর্ণ না করা দু’জনসহ ফাইল পাঠায়; তখন আমরা সেটি ফেরত পাঠাই। এটি দেশের শিক্ষা খাতের জন্য ভালো নয়। তাই দেশের শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করছি।