সড়কের কাজ ফেলে উধাও ঠিকাদার, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

- আপডেট সময় : ০৬:০২:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালি সড়কটি কয়েক বছর ধরে বেহাল অবস্থায় ছিল। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর কাজ শুরু হওয়ায় সড়কে চলাচলকারীরা একটু স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিদিন টেকেনি, স্বস্তি এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার, ফলে বন্ধ রয়েছে সড়কের কাজ।
সড়কটির কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের এপ্রিলে। কিন্তু অর্ধেক কাজ শেষ না কর উধাও হয়েছেন ঠিকাদার। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের।
মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাসে ইফতি টিসিএল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
মঠবাড়িয়া শূন্য কিলোমিটার থেকে টাকবাজার পর্যন্ত দুইটি প্যাকেজে ৬ কিলোমিটার রাস্তায় সংস্কার ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রথম প্যাকেজে তিন কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় প্যাকেজটিতে তিন কিলোমিটারের রাস্তার সংস্কারে জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিল ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে।
কিন্তু সড়কে ইটের খোয়া ফেলেই লাপাত্তা ঠিকাদার।
সরেজমিন দেখা যায়, ৬ কিলোমিটার রাস্তার পুরনো কার্পেট উঠিয়ে নতুন করে ইটের খোয়া দেওয়া হয়েছে। সেই খোয়া এখন উঠে চলাচলের বাধা সৃষ্টি করছে। ব্যস্ততম এই সড়কে বালু জমে গেছে। এতে আটকা পড়ে কেউ গাড়ি ঠেলে তুলছেন আবার কেউ বালুর মধ্যে পড়ে বেহাল অবস্থা হয়েছে।
সড়কটিতে বেশি ভুগান্তি পোহাচ্ছে মালবাহী পরিবহনসহ যাত্রীবহনকারী ছোট বড় গণপরিবহন। এদিকে সড়কের ধুলার কারণে একদিকে যেমন যান চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগতভাবে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে সড়কের পাশে বসবাস করা স্থানীয়দের।
পথচারী ও গাড়ির চালকরা জানান, এই সড়কটি উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম আঞ্চলিক সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ৪-৫ হাজার গাড়ি চলাচল করতো। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে কয়েকশ গাড়ি চলে। পরিচ্ছন্ন পোশাকে একবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেই সেটি আর ব্যবহার উপযোগী থাকছে না। মাথা ঢেকে আর মুখে মাস্ক পরেও চলাচল করা যায় না। এখনই যে অবস্থা তাতে সামনে বর্ষার সময় আসলে এই সড়ক দিয়ে কোনো মতেই আর চলাচল করা যাবে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামী লীগের আমলে রাস্তায় ইটের খোয়া ফেলে রেখেছে। এরপর আর কোনো কাজ দেখিনি। আমাদের ঘর বাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাপানির রোগ এলাকায় বাড়ছে এই ধুলার ফলে।
জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি টিসিএলের স্বত্তাধীকারী পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা ঠিকাদারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ রাখছি। যাতে দ্রুত কাজটি শেষ করতে পাড়ি। তাছাড়া রাস্তায় ৭৪টি বড় গাছ জেলা পরিষদ কাটতে দেয়নি তাই কাজে বিলম্ব হচ্ছে। ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বিল দিয়েছি। সরকার পরিবর্তনের ফলে নতুন একটি বিল সাড়ে তিন কোটি টাকার দাখিল করতে পারেননি ঠিকাদার। আমাদের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শেষ করে জনসাধারণের জন্য চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া।
পিরোজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নরুল আলম জানান, রাস্তার গাছ কাটার জন্য তারা মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে চিঠি পেয়েছেন। গাছ কাটার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এসব গাছ কাটতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।