সিলেট ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিয়োগ বাণিজ্যের আবাস

৯৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতকারী সেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেলেন ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়ে

সলমান চৌধুরী
  • আপডেট সময় : ০৯:২১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০৫ বার পড়া হয়েছে

সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল এবং শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ তহবিলের ৯৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে উঠে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে।

বিগত ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২৭ আগষ্ট থেকে আত্মগোপনে চলে যান মোহাম্মদ দুলাল মিয়া। এরপর ২৮ আগষ্ট ও ২ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্রাক্তন – বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ ও বর্তমান কর্মরত শিক্ষকবৃন্দ জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপেক্ষিতে ওসমানীনগর উপজেলা প্রকৌশলীকে আহবায়ক করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

শিক্ষকদের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়া স্কুলের শিক্ষকদের মানষিক চাপে রাখতেন। তার মতের বিরুদ্ধে গেলে বিভিন্নভাবে হয়রাণি সহ চাকুরী হারানোর ভয়ভীতি ও বেতন-ভাতা বন্ধের হুমকী প্রদান করতেন। তাছাড়া মাসিক বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে প্রদান না করা,শিক্ষক-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলের ৭-৮ মাসের টাকা শিক্ষকদের স্ব স্ব হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে নিজের কাছে জমা রাখেন। তাছাড়া স্কুলের সহকারী শিক্ষক এম বি সঞ্জয় কুমার দত্তকে চাপের মুখে ফেলে তার সরকারী বেতনের ব্যাংক একাউন্টের বিপরীতে ২ লক্ষ টাকা লোন উঠিয়ে সেইটিও আত্মসাৎ করেন তিনি।

এরই পরিপেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ্রমা দাস (স্মারক নং – ০৫.৪৬.৯১৬০.০০০.৩২.০০১.২০.৩৩) ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে অভিযোগের জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে তিনি (দুলাল মিয়া) জবাব দাখিল করিলেও সেইটি সন্তোষজনক নয় বলে প্রতীয়মান হয়।

এদিকে ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখে স্কুলের এড হক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ্রমা দাস এর সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় আত্মগোপনে থাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার হেফাজতে থাকা স্কুলের যাবতীয় হিসাব ও কাগজপত্রাদি উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা এবং সভার উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে ৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহানাজ পারভীনের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলের উপস্থিতিতে মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার হেফাজতে থাকা তালাবন্ধ কক্ষের তালা ভেঙ্গে যাবতীয় নথিপত্র ও অন্যান্য জিনিষপত্রাদি উদ্ধার করে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আজফর উদ্দিনের নিকট সমঝিয়ে দেয়া হয়।

অভিযুক্ত মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে এই ব্যাপারে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,এই রকম আত্মসাতের কোন ঘটনা ঘটেনি,এইগুলো সম্পূর্ণ ভূয়া। তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেন নি বলে স্পষ্টভাবে জানান প্রতিবেদককে।

এদিকে তার নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে গত ১৭ এপ্রিল স্কুলের ব্যাংক হিসাবে ১৬,৭৫,৮০৭ টাকা জমার স্লীপ এসেছে আজকের পাতার হাতে। এছাড়াও শিক্ষকদের বেতন – ভবিষ্যৎ তহবিল ও অবসরপ্রাপ্ত ও মারা যাওয়া ৩ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ বকেয়া ৯,৪৫,৫১৪ টাকা পরিশোধের তালিকা আমাদের হাতে এসেছে।

এইসব বিষয়কে নাকোচ করে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন মোহামদ দুলাল মিয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন জানান, ৫ আগষ্টের পর মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় ছাত্র-জনতার আচরণ সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল এবং স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও ভবিষ্যত ফান্ডের টাকার গড়মিল ছিল। এইগুলো স্কুল কমিটি বসে সমাধান করেছে। ৯৫ লক্ষ টাকার গড়মিলের হিসাব পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,সেইটা পেয়েছেন।

এদিকে অভিযুক্ত মোহাম্মদ দুলাল মিয়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন। তবে তার সাবেক কর্মস্থলের টাকা আত্মসাতের ঘটনা পুরোপুরি আড়াল করেছেন তিনি। এদিকে নিয়োগ পেলেও গত ১৫ এপ্রিল থেকে স্কুলে অফিস না করে তিনি নিয়মিত অফিস করছে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালের রুমে। এছাড়াও ১৫ তারিখে তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব পেয়ে অফিস করেছেন বলে দাবী করলেও সরেজমিনে স্কুলের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার কোন নাম ও স্বাক্ষর খুজে পাওয়া যায় নি।

এই ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়,স্কুলের প্রধান শিক্ষক ১৫ তারিখ থেকে স্কুলে আসার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত তিনি স্কুলে আসেন নি। কবে আসবেন এই ব্যাপারে কেউ কিছু জানেন না বলেও জানান তারা।

এই ব্যাপারে স্কুলের অভিভাবক কমিটির সদস্য ডাঃ ফয়সল আহমদ প্রতিবেদককে জানান,সদ্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষককে দ্বায়িত্ব দেয়া হলেও প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে এখনো দায়িত্ব দেয়া হয় নি। কি কারণে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,তার বিরুদ্ধে আমাদের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন,এই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে তাকে এখনো দ্বায়িত্ব দেয়া হয় নি। স্কুলের সভাপতি ডাঃ জিয়াউর রহমান চৌধুরী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলে তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হবে কি না বলা যাবে।

অভিভাবক কমিটির আরেক সদস্য ডাঃ বেনজামিন জানান,প্রধান শিক্ষক অফিসিয়ালি দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আমরা জেনেছি। এই ব্যাপারে স্কুলের সভাপতি জানেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ কমিটিতে থাকা এক সদস্য জানান, এই নিয়োগে বেশ বড় একটি বাণিজ্য হয়েছে। তবে কে বাণিজ্য করেছেন তা তিনি বলতে রাজি হন নি।

এই ব্যাপারে স্কুলের সভাপতি ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ জিয়াউর রহমান চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এছাড়াও তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি বিষয়টি দেখে কোন উত্তর দেন নি।

এইদিকে গত ২১শে এপ্রিল ২০২৫ইং তারিখে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সৈয়দ সাদী বখত নামে এক প্রাক্তন ছাত্র স্কুলের সভাপতি বরাবরে একটি অভিযোগ পত্র দায়ের করেছেন। এই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে এখনো পর্যন্ত যোগদান করতে দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার ফেইসবুক একাউন্ট ঘেটে দেখা যায়,ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষে বেশ কিছু পোষ্ট শেয়ার করেছেন তিনি। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ ভ্রমনের লাগেজ বিলাশ সংক্রান্ত একটি নিউজও শেয়ার করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

নিয়োগ বাণিজ্যের আবাস

৯৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতকারী সেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পেলেন ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়ে

আপডেট সময় : ০৯:২১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল এবং শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ তহবিলের ৯৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে উঠে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে।

বিগত ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২৭ আগষ্ট থেকে আত্মগোপনে চলে যান মোহাম্মদ দুলাল মিয়া। এরপর ২৮ আগষ্ট ও ২ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্রাক্তন – বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ ও বর্তমান কর্মরত শিক্ষকবৃন্দ জেলা প্রশাসক বরাবরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপেক্ষিতে ওসমানীনগর উপজেলা প্রকৌশলীকে আহবায়ক করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

শিক্ষকদের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়া স্কুলের শিক্ষকদের মানষিক চাপে রাখতেন। তার মতের বিরুদ্ধে গেলে বিভিন্নভাবে হয়রাণি সহ চাকুরী হারানোর ভয়ভীতি ও বেতন-ভাতা বন্ধের হুমকী প্রদান করতেন। তাছাড়া মাসিক বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে প্রদান না করা,শিক্ষক-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলের ৭-৮ মাসের টাকা শিক্ষকদের স্ব স্ব হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে নিজের কাছে জমা রাখেন। তাছাড়া স্কুলের সহকারী শিক্ষক এম বি সঞ্জয় কুমার দত্তকে চাপের মুখে ফেলে তার সরকারী বেতনের ব্যাংক একাউন্টের বিপরীতে ২ লক্ষ টাকা লোন উঠিয়ে সেইটিও আত্মসাৎ করেন তিনি।

এরই পরিপেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ্রমা দাস (স্মারক নং – ০৫.৪৬.৯১৬০.০০০.৩২.০০১.২০.৩৩) ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে অভিযোগের জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে তিনি (দুলাল মিয়া) জবাব দাখিল করিলেও সেইটি সন্তোষজনক নয় বলে প্রতীয়মান হয়।

এদিকে ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখে স্কুলের এড হক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ্রমা দাস এর সভাপতিত্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় আত্মগোপনে থাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার হেফাজতে থাকা স্কুলের যাবতীয় হিসাব ও কাগজপত্রাদি উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা এবং সভার উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে ৮ এপ্রিল ২০২৫ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহানাজ পারভীনের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলের উপস্থিতিতে মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার হেফাজতে থাকা তালাবন্ধ কক্ষের তালা ভেঙ্গে যাবতীয় নথিপত্র ও অন্যান্য জিনিষপত্রাদি উদ্ধার করে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আজফর উদ্দিনের নিকট সমঝিয়ে দেয়া হয়।

অভিযুক্ত মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে এই ব্যাপারে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,এই রকম আত্মসাতের কোন ঘটনা ঘটেনি,এইগুলো সম্পূর্ণ ভূয়া। তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেন নি বলে স্পষ্টভাবে জানান প্রতিবেদককে।

এদিকে তার নিজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে গত ১৭ এপ্রিল স্কুলের ব্যাংক হিসাবে ১৬,৭৫,৮০৭ টাকা জমার স্লীপ এসেছে আজকের পাতার হাতে। এছাড়াও শিক্ষকদের বেতন – ভবিষ্যৎ তহবিল ও অবসরপ্রাপ্ত ও মারা যাওয়া ৩ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ বকেয়া ৯,৪৫,৫১৪ টাকা পরিশোধের তালিকা আমাদের হাতে এসেছে।

এইসব বিষয়কে নাকোচ করে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন মোহামদ দুলাল মিয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন জানান, ৫ আগষ্টের পর মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় ছাত্র-জনতার আচরণ সংক্রান্ত অভিযোগ ছিল এবং স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও ভবিষ্যত ফান্ডের টাকার গড়মিল ছিল। এইগুলো স্কুল কমিটি বসে সমাধান করেছে। ৯৫ লক্ষ টাকার গড়মিলের হিসাব পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,সেইটা পেয়েছেন।

এদিকে অভিযুক্ত মোহাম্মদ দুলাল মিয়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন। তবে তার সাবেক কর্মস্থলের টাকা আত্মসাতের ঘটনা পুরোপুরি আড়াল করেছেন তিনি। এদিকে নিয়োগ পেলেও গত ১৫ এপ্রিল থেকে স্কুলে অফিস না করে তিনি নিয়মিত অফিস করছে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালের রুমে। এছাড়াও ১৫ তারিখে তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব পেয়ে অফিস করেছেন বলে দাবী করলেও সরেজমিনে স্কুলের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার কোন নাম ও স্বাক্ষর খুজে পাওয়া যায় নি।

এই ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়,স্কুলের প্রধান শিক্ষক ১৫ তারিখ থেকে স্কুলে আসার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত তিনি স্কুলে আসেন নি। কবে আসবেন এই ব্যাপারে কেউ কিছু জানেন না বলেও জানান তারা।

এই ব্যাপারে স্কুলের অভিভাবক কমিটির সদস্য ডাঃ ফয়সল আহমদ প্রতিবেদককে জানান,সদ্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষককে দ্বায়িত্ব দেয়া হলেও প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে এখনো দায়িত্ব দেয়া হয় নি। কি কারণে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,তার বিরুদ্ধে আমাদের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন,এই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে তাকে এখনো দ্বায়িত্ব দেয়া হয় নি। স্কুলের সভাপতি ডাঃ জিয়াউর রহমান চৌধুরী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলে তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হবে কি না বলা যাবে।

অভিভাবক কমিটির আরেক সদস্য ডাঃ বেনজামিন জানান,প্রধান শিক্ষক অফিসিয়ালি দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আমরা জেনেছি। এই ব্যাপারে স্কুলের সভাপতি জানেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ কমিটিতে থাকা এক সদস্য জানান, এই নিয়োগে বেশ বড় একটি বাণিজ্য হয়েছে। তবে কে বাণিজ্য করেছেন তা তিনি বলতে রাজি হন নি।

এই ব্যাপারে স্কুলের সভাপতি ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ জিয়াউর রহমান চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এছাড়াও তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি বিষয়টি দেখে কোন উত্তর দেন নি।

এইদিকে গত ২১শে এপ্রিল ২০২৫ইং তারিখে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সৈয়দ সাদী বখত নামে এক প্রাক্তন ছাত্র স্কুলের সভাপতি বরাবরে একটি অভিযোগ পত্র দায়ের করেছেন। এই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়াকে এখনো পর্যন্ত যোগদান করতে দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে মোহাম্মদ দুলাল মিয়ার ফেইসবুক একাউন্ট ঘেটে দেখা যায়,ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষে বেশ কিছু পোষ্ট শেয়ার করেছেন তিনি। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ ভ্রমনের লাগেজ বিলাশ সংক্রান্ত একটি নিউজও শেয়ার করেন তিনি।